ক্রিকেট মাঠে প্লেয়ার দের মধ্যেই ঝামেলা স্বাভাবিক বিষয়! কিন্তু মাঠের বাইরে দুজন আম্পিয়ার যেভাবে পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে জড়ালেন, তা দেখে অবাক হবেন অনেকেই। বাইশ গজ বা ক্রিকেট মাঠে নয়, ঝামেলা একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। আর তা থেকেই একে অপরের বিরুদ্ধে পুলিশ স্টেশনে নালিশ জানাতে গেল দুই আম্পায়ার। এই দুই আম্পায়ারই কলকাতা ক্রিকেট মাঠের পরিচিত মুখ, একজন সব্যসাচী সরকার, অপরজন বিজয় সরকার।
প্রথমজনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়জন পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, তাঁকে গ্রুপের মধ্যে অযাচিতভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, এবং তাঁর নামে নানারকম ভুল তথ্য পরিবেশন করে ছাত্রদের কাছে ইমেজ নষ্ট করা হচ্ছে। এই নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্পোর্টসের ওই গ্রুপটি কার্যত উঠে গিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত দিন তিনেক আগেই। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্পোর্টস রেফারি ও আম্পায়ারদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপে সদস্য সব মিলিয়ে প্রায় ৩০০ জন। তাতে বাংলার নামী ফিফা রেফারিদের মধ্যে রয়েছেন উদয়ন হালদার, প্রাঞ্জল ব্যানার্জিরা। এমনকি আম্পায়ারদের মধ্যেও অনেকেই আছেন যারা বোর্ডেরও আম্পায়ার।
শিক্ষার্থি রেফারি ও আম্পায়াররা যাতে করে সিনিয়রদের থেকে কোনও উপদেশ পায় সেজন্যই লকডাউনের মধ্যে এই গ্রুপটি খোলা হয়, কিন্তু কালক্রমে ওই গ্রুপটি হয়ে ওঠে সমালোচনার আখরা। সবাই যে যার নামে সমালোচনা করতে শুরু করেন। এই নিয়ে সমস্যা বেড়ে যায় আরও। একদা সিএবি আম্পায়ার সব্যসাচীর নামে গ্রুপের বাকিদের অভিযোগ, তিনি এতই উন্নাসিক যে সকলের সঙ্গে নানা কথার পরিপ্রেক্ষিতে ঝামেলা সৃষ্টি করেন। এই নিয়ে বহুদিনের অভিযোগ। এমনকি সিএবি-তে তিনি এতই বিতর্কের যে ময়দানে কোনও ম্যাচে তাঁকে পোস্টিংও দেওয়া হতো না। কারণ তাঁকে সিএবি কর্তারাও পছন্দ করেন না।
শুধু তাই নয়, সব্যসাচী বাংলায় আর তেমন সুবিধে করতে পারছেন না, তাই ঝাড়খন্ড ক্রিকেট সংস্থার প্যানেলে চলে যান তিনি। সেখানেও নানা টুর্নামেন্টে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে। তিনিই ওই গ্রুপে সতীর্থ আম্পায়ার বিজয়ের নামে নানা কথা বলেছেন, যেটি তিনি খুব একটা ভালোভাবে নেননি। সেই জন্যই সোদপুর পুলিস স্টেশনে গিয়ে নালিশ করেন তিনি। এই নিয়ে বিজয়ের মন্তব্য, আমাকে অনেকদিন ধরেই নানা কথা শুনতে হচ্ছে, এটা আমার পক্ষে অসম্মানের, তাই আমি পুলিসের দ্বারস্থ হয়েছি। সব্যসাচীর সঙ্গে এখনও ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি অবশ্য।
বিতর্কের কয়েকদিন ধরেই ওই গ্রুপে সব্যসাচী ক্রমাগত সিনিয়রদের উদেশ্যে লিখে গিয়েছেন, এই গ্রুপে যারা সিনিয়ররা রয়েছেন, তাঁরা কোনও বিষয়েই মন্তব্য করবেন না প্লিজ। এবং জেলা সংস্থার আরও কর্তা আবার পালটা লিখেছেন, সিনিয়ররা যদি মন্তব্যই না করেন, তাঁদের এই গ্রূপ থেকে সরে যাওয়াই ভাল হবে। ওই পরিপ্রেক্ষিতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বহু সিনিয়র আম্পায়ার ও রেফারি বেরিয়ে যান নিজেরাই। তারপরেই এমন ঘটনা ঘটল।
ময়দানে কোনও ম্যাচ হলেও নয় কথা ছিল। একেবারে মাঠের বাইরে বলা যেতে পারে বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে আম্পায়ারদের মধ্যে এমন কূটকচালি ঘিরে ময়দানে হাসাহাসি। এক সিনিয়র আম্পায়ার জানালেন, ‘‘এসব জিনিস হবে কল্পনাও করা যায় না, ওই কারণেই বাংলা থেকে সেই মানের জাতীয় আম্পায়ার আর উঠছে না। এত বড় আইপিএল হচ্ছে, সেখানে বাংলার কোনও আম্পায়ার নেই, এটা বারবারই হচ্ছে। সেটি নিয়ে লজ্জা না করে এসব ঝামেলাকে কেন্দ্র করে বাংলার আম্পায়ারিংয়ের বিজ্ঞাপন আরও খারাপ হচ্ছে।’’ প্লেয়ার দের মধ্যে নিত্য ঝামেলা লেগে থাকে, এবার কি আম্পিয়ার দের মধ্যেও এসে পড়লো রোজের তর্ক বিতর্কের ব্যাপার, তাহলে খেলার মীমাংসা করবেন কারা? কোথায় যাচ্ছে স্পোর্টস ম্যান স্পিরিট।
প্রতিবেদনে- তানভি সুলতানা