লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের গন্তব্যস্থলে ফেরানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে শুরু করা হয়েছিল শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন। শনিবার রাজ্যসভার অধিবেশনে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল জানালেন, স্পেশাল ট্রেন আসার পথে মৃত্যু হয়েছিল ৯৭ জন শ্রমিকের। শুক্রবারের অধিবেশনে এই প্রশ্ন করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন।
শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে মৃত পরিযায়ী শ্রমিকদের ৮৭ জনের দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশের তরফে ৫১ জনের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে শ্রমিকদের হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, ফুসফুস কিংবা লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তারা।
গত সপ্তাহে সংবাদে প্রকাশিত হয়েছিল, লকডাউনের সময়ে কতজন পরিযায়ী শ্রমিক মারা গিয়েছে, সে সম্পর্কে কোন তথ্য নেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। এরপরই জল্পনা শুরু হয় সমস্ত মহলে। প্রবাসী শ্রমিকদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ১ মে থেকে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালু হয়। ১ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৪৬২১ টি স্পেশাল ট্রেন চালু ছিল। সেই ট্রেনে গন্তব্যে পৌঁছান প্রায় ৪৩ লক্ষ ১৯ হাজার শ্রমিক। এর আগে আরপিএফ-এর তরফে প্রকাশ করা এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, পূর্ব-মধ্য, উত্তর-পূর্ব, উত্তর, উত্তর-মধ্য জোনে বেশি মৃত্যু হয়েছিল শ্রমিকদের।
ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল, ৪ থেকে ৮৫ বছর বয়সীদের মৃত্যুর হার বেশি ছিল। একাধিক প্রসবের ঘটনা ঘটেছে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে। তবে রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল আবেদন করেছিলেন, বয়স্ক ৬৫ উর্ধ্ব, ১০ বছরের নিম্ন বয়স্ক শিশু, অন্তঃসত্ত্বা কোন ব্যক্তি স্পেশাল ট্রেনে যেন না ওঠেন।
এই শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেছিলেন, সামাজিক দূরত্বের না মেনে একসঙ্গে গাদাগাদি করে তুলে রেলমন্ত্রক স্পেশাল ট্রেনের বদলে করোনা এক্সপ্রেস ঢুকিয়ে দিতে চাইছেন। শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে পর্যাপ্ত জল এবং খাবারের কোন বন্দোবস্ত না থাকার অভিযোগ তোলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
শ্রমিক স্পেশাল নিয়ে বিতর্কের সময়ে কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। মৃত মায়ের শাড়ির আঁচল টেনে তার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করছে তার সন্তান। বিহারের মজফ্ফরপুর স্টেশনের ঘটনা সাড়া ফেলে দিয়েছিল দেশে।অনেকের মতে এই ভিডিও প্রমাণ করে পরিযায়ী শ্রমিক দুর্দশার চিত্র।
প্রতিবেদনে: তিথি দাস