সামনেই নির্বাচন। তাই নতুন জনসংযোগ মাধ্যমে এ সড়গড় হওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দিতে হচ্ছে রাজ্য শাসক দলের মন্ত্রী, বিধায়ক ও সাংসদ দের প্রায় সকলকেই।
কেমন ইন্টারভিউ, আর কেনই বা ইন্টারভিউ।
দেখা যাচ্ছে, প্রায় অর্ধশতক ধরে রাজনীতি করে আসা নেতা কেও টিম পিকে অর্থাৎ প্রশান্ত কিশোরের প্রতিনিধির সামনে বন্ধ ঘরে ইন্টারভিউ দিতে হচ্ছে।
গত এক বছর ধরে প্রশান্ত কিশোর তৃণমূল কংগ্রেস এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে আসছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে এবং সবেচেয়ে বেশি গুরুত্ব ও পেয়েছে, তা হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার।
দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার তো ছিলোই কিন্তু তা আরো ভালোভাবে কাজে লাগতে হবে তার জন্য আইপ্যাক পরামর্শ দিচ্ছে।
আর দল ও দলের শাখা সংগঠনের বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিই এই পরামর্শ নিয়েই চলছেন।
গত মার্চ মাস থেকে চালু হওয়া দুটি পেজ,’ বাংলার গর্ব মমতা’, আর ‘দিদি কে বলো’.. মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর রাজনীতি ও প্রশাসনের মুখ হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন্দ্রীয়ভাবে চলছে।
গত মার্চ মাসে শুরু ‘বাংলার গর্ব মমতা’ এই পেজ এর ফেসবুকে ফলোয়ার ২৪ লক্ষ,আর ইনস্টাগ্রাম ও টুইটার হ্যান্ডেল এ ফলোয়ার ৭৫ হাজার ছাড়িয়েছে বলে তৃণমূলের দাবি।
এই পথ অনুসরণ করে, বিধানসভা, ব্লক সহ আঞ্চলিক স্তরেও এই পেজ চালু করা হয়েছে।
আইপ্যাক এর তত্ত্বাবধানে ২৯৪ টি বিধানসভা ও ২৩ টি জেলাতেও এই পেজ গুলো চলছে।
ইউটিউবেও পাওয়া যাচ্ছে তৃণমূল দলের কাজের নমুনা ইত্যাদি। চ্যানেলের নাম ‘বাংলার গর্ব মমতা’।
‘দিদিকে বলো’ পেজ টি শুরু হয়েছে গতবছর জুলাইমাসে। ফেসবুকে ফলোয়ার ৫ লক্ষ প্রায়।
মূলত সরকার ও দলের কাজকর্ম নিয়েই এই দুটি পেজ সাজাচ্ছে আইপ্যাক এর ডিজিটাল টিম।
রাজ্যস্তরে কমপক্ষে ১৫ জনের একটা টিম কাজ করছে।জেলায় তাদের নির্দেশ কায়েম রাখতে দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সংযোগ সাধনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রা রয়েছেন।
অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস এর মমতা ব্যানার্জি ও অভিষেক ব্যানার্জি এর নামে দুটো আলাদা পেজ রয়েছে। যাতে করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কাজকর্মের প্রচার হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
মমতার নামে পেজ টা মুখ্যমন্ত্রী দপ্তর থেকে পরিচালিত হয় এবং অভিষেক ব্যানার্জির পেজ টা তার নিজের দপ্তর থেকেই পরিচালিত হয়।
দলের মহাসচিব পার্থবাবু বলেন, ” সোশ্যাল মিডিয়া কে যেভাবে মিথ্যা ও অপপ্রচারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে তার মোকাবিলায় সত্য তুলে ধরতে আমরাও নিজেদের পরিকল্পনা মতো কাজ করছি”।
রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এর কথায়, “দলের কড়া নির্দেশ আছে কোনোভাবে ভুয়ো ছবি আর ঘৃণা সৃষ্টিকারী কোনো বক্তব্য ছড়ানো যাবেনা।
বিজেপির আইটি সেলের সাথে আমাদের এটাই পার্থক্য। আমরা বুথ লেভেল অবধি ঘৃণা যাতে না ছড়ায় তার জন্য কাজ করছি।”
ডেরেক এর দাবী, তাদের দল বিজেপির মতো অর্থবান নয়, তাই দলে একটা পরিবারের মতো কাজ করছে। দলের নেতা সহ নেতাদের স্বামী, স্ত্রী, সন্তান সবাই মিলে নানা বিষয়ে দলের বক্তব্য তুলে ধরে।
বিজেপির ভার্চুয়াল সমাবেশের পর, একুশে জুলাই উপলক্ষে তৃণমূলও একটি ভার্চুয়াল সমাবেশ করে।
দুটি সভাতেই দুই দলের নেতা থেকে শুরু করে দলের এর নেতা কর্মীরা ফেসবুকে প্রচার চালান।
দুটো সভার বিশ্লেষণের পর ছাত্রসংগঠনের প্রতিষ্ঠাদিবসে কৌশল বদল করে তৃণমূল।
মুখ্যমন্ত্রী’র বক্তৃতা একেবারে তৃণমূল স্তর অবধি পৌছে দেওয়ার সাথে দর্শক সংখ্যার রেকর্ড রাখতে দলের কোন অ্যাকাউন্ট থেকে কিভাবে শেয়ার করা হবে সেটা অবধি আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
বক্তৃতার সময় কে কীভাবে কমেন্ট করবে তাও আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে দলের তরফ থেকে।
জনপ্রতিনিধি দের ফেসবুকে পোস্টের বিষয় ও ঠিক করে দেয় মাঝে মাঝে তৃণমূলের এই আইটি সেল।
নিজের পেজ এ ভেসে ওঠা অনেক তথ্যই অনেক পরে জানতে পারেন সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি।
আইটি সেলের টিম আগে থেকে কন্টেন্ট পাঠিয়ে দেয় ওই প্রতিনিধির তরফে দায়িত্বে থাকা কর্মী কে।
তারা তা পোস্ট করে।
এক বিধায়কের কথায়, “বহুসময় আইপ্যাক বিষয় তৈরি করে পাঠিয়ে দেয় পোস্ট করার জন্য।
তবে সরাসরি আমরাও নিজের মতো পোস্ট করতে পারি। তাতে কোনো বাধা নেই।”
প্রতিবেদনে-জাহেদ আলী