রাজনৈতিক শিষ্টাচার তো অনেক রাজনৈতিক দলেই দেখা যেতো একসময়। কিন্তু এখন যায়না। তবে আজ আবার এমন এক ঘটনা ঘটলো যেটা অবাক করলো সব রাজনৈতিক পক্ষকেই। করোনা আক্রান্ত তৃণমূল নেতার জন্য হাসপাতালে প্লাজমা দিতে পৌঁছালেন সিপিএম নেতা! উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় এই ঘটনার কথা মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। হাবড়া পুরসভার পুরপ্রশাসক নীলিমেশ দাস করোনা আক্রান্ত হয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। গত রবিবার স্থানীয় সিপিএম নেতা তথা পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা ঋজিনন্দন বিশ্বাস নীলিমেশবাবুর প্লাজমা থেরাপি শুরু হবে জানতে পারেন। এই খবর কানে যেতেই হাবড়া থেকে সোজা সল্টলেকের ওই বেসরকারি হাসপাতালে চলে যান ঋজিনন্দন।
গত আগস্টে ঋজিনন্দনও করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেরেও উঠেছেন তারপর। সে কারণেই ছুটেছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু কিছু কারণে তাঁর প্লাজমা গ্রহণ করা যায়নি।
হাসপাতাল জানিয়েছে, নীলিমেশবাবুর আরটিপিসিআর টেস্ট হয়েছিল। কিন্তু সোয়াব টেস্ট হয়নি। তাই তাঁর প্লাজমা গ্রহণ করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত প্লাজমা দিতে না দিতে পেরে মন খারাপ হয়ে যায় ঋজিনন্দনের। সিপিএম নেতার এই উদ্যোগের খবর তৃণমূল নেতা বেডে শুয়েই পেয়েছেন। তিনিও অভিনন্দন জানিয়েছেন ঋজিনন্দনকে। এবং বলেছেন, এটাই হাবড়ার রাজনৈতিক শিষ্টাচার।
সিপিএম নেতা ঋজি নন্দন বলেন, “আগে আমরা মানুষ, তারপর সিপিএম , তৃণমূল বা অন্য কিছু। মানুষ হয়ে যদি মানুষের পাশে না দাঁড়াই তাহলে আর কীসের কমিউনিস্ট পার্টি করলাম। বিরোধী মতাদর্শের বলে বিপদে তাঁর পাশে দাঁড়াব না, এমন কু বেড়াজাল আমাদের দল শেখায় না।”
সাধারণ মানুষের মতে, এটাই তো স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল সম্পর্কে বিরোধিতার অনুশীলনে সেসব উঠে যেতে বসেছে বাংলার রাজনীতি থেকে। তাঁদের মতে, একটা সময় ছিল যখন বাংলার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায় বলতেন, “জ্যোতি আসেনি, তাহলে আজকে অধিবেশন হবে না!”কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বাংলার রাজনীতি থেকে সেসব উবে গিয়েছে। আজ তাই নীলিমেশের পাশে ঋজিনন্দনের ছুটে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ অবাক হচ্ছেন। কিন্তু এটাই তো সঠিক রাজনীতির বৈশিষ্ট! ভূপেন হাজারিকার গানের কথায় বলা যায় ” মানুষ মানুষেরই জন্য! জীবন তো জীবনেরই জন্য!”
প্রতিবেদনে- তানভি সুলতানা