এতদিন বাংলায় আয়ুষ্মান ভারত ও প্রধান মন্ত্রী কৃষক সম্মান প্রকল্প চালু করতে দেননি তিনি।
কিন্তু কদিন আগেই কেন্দ্রে মমতা চিঠি পাঠান যে, আয়ুষ্মান ভারত ও কৃষক সম্মান প্রকল্প বাংলায় চালু করতে রাজি। তবে শর্তসাপেক্ষ৷
এই দুই প্রকল্পেই টাকা কেন্দ্র থেকে সরাসরি উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে যায়। কিন্তু বাংলায় চালু করতে হলে, রাজ্য সরকারের মাধ্যমে সেই টাকা বিলি করতে হবে।
অর্থাৎ, টাকা প্রথমে দিল্লি থেকে নবান্নে, তারপর সেখান থেকে উপভোক্তা দের অ্যাকাউন্ট এ যাবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই শর্ত শুনে মঙ্গলবার তাঁর উদ্দেশ্যে আক্রমণ শানালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর।
তিনি টুইট করে বলেন, “পিএম কিষাণ হল চাষির অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানোর পোক্ত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা। এখানে কাটমানিও নেই, মধ্যস্থতাভোগীও নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার এর এজেন্ট হতে চায় কেন? হায় ভগবান! ঘোলা জলে মাছ ধরার সুযোগ খুঁজছে কি?”
এদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র প্রতিক্রিয়া, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই শর্তের মধ্যেই গল্পটা লুকিয়ে আছে। এতোদিন এই দুই প্রকল্প বাংলায় বাস্তবায়িত করতে চায়নি। কিন্তু এখন ভোট আসছে। ভাবছে কেন্দ্র এই দুই প্রকল্প বাবদ যে কোটি কোটি টাকা দেবে তা থেকে কাটমানি খাবে। ওই টাকা দিয়ে ভোটে লড়বে।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, মমতার সরকার যদি কেন্দ্রকে এতটাই বেকুব ভাবে, তাহলে মুর্খের স্বর্গে বাস করছেন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে কেউ কাটমানি না পায়, তাই কেন্দ্র সরাসরি উপভোক্তার অ্যাকাউন্ট এ টাকা টা পাঠায়।
তিনি এই কাটমানি, আমফানের সময় লুঠ এর কথাও উল্লেখ করেন।
আঠারো সালের শেষদিকে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প শুরু হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার বাংলায় চালু করতে দেয়নি। কারণ, তাঁর বক্তব্য ছিল বাংলায় স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প তিনি শুরু করেছেন। সেই প্রকল্পে গরীব পরিবার চিকিৎসা বাবদ ৫ লক্ষ টাকা পেতে পারে। কেন্দ্র সরকার, রাজ্যের প্রকল্পের টুকলি করেছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। একই ভাবে প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান প্রকল্পও বাংলায় বাস্তবায়িত হয়। পরিবর্তে বাংলায় কৃষক বন্ধু প্রকল্প শুরু করেছিলেন তিনি।
পর্যবেক্ষকদের মতে, বাংলায় যে ওই দুই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি,তার একমাত্র কারণ রাজনৈতিক। তৃণমূল হয়তো আশঙ্কা করেছিল ওই প্রকল্প খাতে গরিব পরিবারদের সুবিধা দিয়ে তাঁদের কাছে টানতে চাইবে বিজেপি। এই টানাপোড়েন এর মাঝে পড়ে রাজ্যের একটা বড় অংশের গরিব মানুষের ক্ষতি হয়েছে। প্রতিটি কৃষক পরিবার কেন্দ্রের থেকে অন্তত ৬ হাজার টাকা করে পেতে পারতেন,সেটা এই রাজনীতির চক্রবুহ্যে আটকেই থেকে গেছে।
এই নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সমালোচনা তো ছিলই, সাথে সুপ্রিম কোর্ট ও একটি মামলায় নবান্নকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে যে, কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের রূপায়ণ কেন করেনি পশ্চিমবঙ্গ? আর তখনই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী হর্ষবর্ধন ও কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরকে চিঠি লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দুই চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, বাংলায় আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প ও কৃষক সম্মান প্রকল্প চালু করতে রাজি।
কিন্তু এই দুই প্রকল্পেরই খরচ কেন্দ্র কে বহন করতে হবে, এবং এই খরচ টা রাজ্যসরকারের মাধ্যমে করাতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই শর্ত নিয়েই নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দেখা যাক জল কতদূর পর্যন্ত গড়ায়!
প্রতিবেদনে-জাহেদ আলী